কক্সবাজার জেলা বারের নির্বাচন শনিবার, ২ প্যানেলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই’র আভাস

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

শনিবার ২৬ ফেব্রুয়ারী কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন। বার্ষিক এই নির্বাচনে প্রতি বারের মতই এবারো দু’টি প্যানেল যথারীতি নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্ধিতা করছে।

দু’টি প্যানেলের একটি হচ্ছে-সরকার সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত ও সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ মনোনীত এডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেল ও এডভোকেট মোহাম্মদ তারেক পরিষদ এবং অপরটি বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা আইনজীবী সমর্থিত জাতীয় আইনজীবী ঐক্য পরিষদ মনোনীত এডভোকেট মোহাম্মদ আমির হোসাইন ও এডভোকেট মুহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার পরিষদ।

এছাড়া, প্যানেল বিহীন এককভাবে এডভোকেট (অধ্যাপক) নাছির উদ্দিন সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। তিনি আওয়ামী লীগ ও সরকার সমর্থক মহাজোট সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ থেকে পর পর ৫ বছর মনোনয়ন চেয়ে ব্যর্থ হয়ে একক প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করছেন।

উভয় প্যানেলের প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে আইনজীবীদের কল্যান তহবিল (পেনশন) এর অর্থ সহ অন্যান্য আর্থিক সুবিধা বৃদ্ধি, বর্তমান আদালত ভবন এলাকায় চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন নির্মাণের জন্য জায়গার ব্যবস্থা করা, চিকিৎসা তহবিল গঠন, চেম্বার সংকট নিরসনে আরো ২ টি নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ, নির্মাণাধীন এনেক্স ভবনের বাকী থাকা উর্ধ্বমূখী সম্প্রসারণ কাজ সম্পন্ন করা, কক্সবাজার জুডিশিয়ারিকে ‘বি’ গ্রেড থেকে ‘এ’ গ্রেডে উন্নতকরণ, আইনজীবী ভবনে প্রসস্থ মসজিদ নির্মাণ, বার ও বেঞ্চের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা, বেঞ্চে অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে উদ্যোগ নেওয়া, নবীন আইনজীবীদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, আদালত এলাকা থেকে টাউট বাটপার নির্মুলে ভিজিল্যান্স টিমের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করা, বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে আদালত এলাকায় বিদ্যুতের সাব স্টেশন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া, বার লাইব্রেরীকে আরো সমৃদ্ধ করা, আইনজীবী হেল্প ডেস্ক স্থাপন, মহিলা আইনজীবীদের জন্য প্রয়োজনীয় সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান, বাণিজ্যিক ব্যাংকের বুথ স্থাপন, আইনজীবীদের মর্যাদা সুরক্ষা করে পেশার মান বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া সহ আইনজীবীদের কল্যানে আরো বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

প্রার্থীরা ভোটারদের আশ্বস্ত করেছেন, সমিতির পক্ষ হতে আইনজীবীদের মৌলিক ও ন্যায্য সকল অধিকার পূরণের।

দুই প্যানেলের প্রত্যেকে নিজ নিজ প্যানেল জয়ের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। সরকার সমর্থিত বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ মনোনীত প্রার্থীরা উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় তাদেরকে আবারো নির্বাচিত করার আবেদন করেছেন। তারা নির্বাচিত হলে সরকারী সহায়তা অপেক্ষাকৃত বেশী পাবেন, এমনটি ভোটারদের মাঝে তুলে ধরে বিজ্ঞ আইনজীবীদের ভোট আদায়ের চেষ্টা করছেন।

অপরদিকে, জাতীয় আইনজীবী ঐক্য পরিষদ মনোনীত প্রার্থীরা আইনজীবীদের মর্যাদা সুরক্ষা, প্রভাবমুক্ত ও সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, বার ও বেঞ্চের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দূরকরণ, কক্সবাজার জেলা আইনঙ্গনে সামগ্রিক পরিবর্তন সহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেছেন ভোটারদের মাঝে। এভাবে উভয় প্যানেল প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি দিয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করার প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছেন, এমন বিশেষজ্ঞদের মতে, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির এবারের নির্বাচন হবে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তীব্র। ন্যুনতম ভোটের ব্যাবধানে জয় পরাজয় নির্ধারিত হবে বলে তাদের ধারণা। উভয় প্যানেলের মধ্যে আসন ভাগাভাগি হতে পারে। নির্বাচনে কোন প্যানেলই একক নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠিতা পাবেনা বলে পর্যবেক্ষক ও নিরপেক্ষ সিনিয়র আইনজীবীদের ধারণা।

গত ১৬ ফেব্রুয়ারী মনোনয়নপত্র দাখিল করে উৎসবমুখর ও গণতান্ত্রিক পরিবেশে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছেন প্রার্থীরা দীর্ঘ নয় দিন। ২ প্যানেলের ৩৪ জন সহ মোট ৩৫ জন প্রার্থীই ক্যাম্পিং ও সরব প্রচারণা শেষে এখন ভোট কেন্দ্রমুখী হয়েছেন। কক্সবাজারের বাইরে অবস্থান করা ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনার চেষ্টা করছেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও সরকার সমর্থক মহাজোট সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীরা হলেন-সভাপতি পদে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির তিন বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেল এবং সাধারণ সম্পাদক পদে সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোহাম্মদ তারেক, সিনিয়র সহ সভাপতি পদে এডভোকেট মোহাম্মদ জাকারিয়া-১, সহ সভাপতি পদে এডভোকেট ফখরুল ইসলাম চৌধুরী গুন্ধু, সহ সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) পদে এডভোকেট এডভোকেট নুরুল ইসলাম সায়েম, সহ সাধারণ সম্পাদক (হিসাব) পদে এডভোকেট মো: আকতার হোসেন, পাঠাগার, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে এডভোকেট বাবলু মিয়া, আপ্যায়ন ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে এডভোকেট মনিরুল ইসলাম, ৯ টি নির্বাহী সদস্য পদে এডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাক, এডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী, এডভোকেট আববাস উদ্দিন চৌধুরী, এডভোকেট আমানুল হক, এডভোকেট মোহাম্মদ রিদুয়ান আলী, এডভোকেট তাজমিন হুদা চৌধুরী, এডভোকেট মোহাম্মদ আলম, এডভোকেট শবনম মুশতারী, এডভোকেট মোহাম্মদ জুলকারনাইন জিল্লু।

অপরদিকে, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম, বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল, ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী ও সমমনা আইনজীবীদের নিয়ে গঠিত জাতীয় আইনজীবী ঐক্য পরিষদের প্যানেলে মনোনয়নপত্র দাখিলকারীরা হলেন-সভাপতি পদে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির বর্তমান সহ সভাপতি, সিনিয়র আইনজীবী, সাহসী আইনজীবী নেতা এডভোকেট মোহাম্মদ আমির হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক পদে সমিতির সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক, সমিতির সাবেক নির্বাহী সদস্য, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কক্সবাজার জেলা বার ইউনিট এর সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মুহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার, সিনিয়র সহ সভাপতি পদে এডভোকেট মোহাম্মদ আবু তাহের-২, সহ সভাপতি পদে এডভোকেট নাজিম উদ্দিন, সহ সাধারণ সম্পাদক (সাধারণ) পদে এডভোকেট সাহাব উদ্দিন সিহাব, সহ সাধারণ সম্পাদক (হিসাব) পদে এডভোকেট মোহাম্মদ মাহবুবুল আলম টিপু, পাঠাগার, তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে এডভোকেট মোহাম্মদ শাহীন, আপ্যায়ন ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে এডভোকেট রবিউল আরফাত, নির্বাহী সদস্য পদে এডভোকেট এস.এম নুরুল ইসলাম, এডভোকেট ইব্রাহিম খলিল, এডভোকেট মোহাম্মদ ছাদেক উল্লাহ, এডভোকেট মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, এডভোকেট মোহাম্মদ ইসহাক, এডভোকেট আবদুর রহিম, এডভোকেট ইফতেখার মাহমুদ, এডভোকেট দেলোয়ার হোসেন কুতুবী ও এডভোকেট আবুল কাসেম।

শুধুমাত্র সাধারণ সম্পাদক পদে তিনজন প্রার্থী রয়েছেন। বাকী ১৬ টি পদে দুই প্যানেলের দুই জন করে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী এডভোকেট ইকবালুর রশিদ আমিন সোহেল ২০০০ সালের ৯ মে এবং সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী এডভোকেট মোহাম্মদ তারেক ২০০২ সালের ২০ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতিতে যোগদান করেন।

আইনজীবী ঐক্য পরিষদের সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী এডভোকেট মোহাম্মদ আমির হোসাইন, ১৯৮৯ সালের ৩ এপ্রিল এবং সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী এডভোকেট মুহাম্মদ তাওহীদুল আনোয়ার ২০০৩ সালের ৫ আগস্ট কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতিতে যোগদান করেন।

প্যানেলবিহীন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এডভোকেট (অধ্যাপক) নাছির উদ্দিন ২০০৮ সালের ১৭ জানুয়ারী কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতিতে যোগ দেন।

নির্বাচনে সিনিয়র আইনজীবী ও কক্সবাজার আইন কলেজের অধ্যক্ষ এডভোকেট মুহাম্মদ বাকের প্রধান নির্বাচন কমিশনার, এডভোকেট মোহাম্মদ ফেরদাউস ও এডভোকেট নুর উল আলম-কে সহকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার, এডভোকেট আবু ছিদ্দিক, এডভোকেট ফরিদ আহামদ, এডভোকেট নুর আহমদ-২ এবং এডভোকেট সিরাজ উল্লাহ কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। এরমধ্যে সহকারী প্রধান নির্বাচন কমিশনার এডভোকেট নুর উল আলম এবং কমিশনার এডভোকেট ফরিদ আহমদ নির্বাচনের দিন চকরিয়া ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করবেন।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ বাকের জানান, শনিবার ২৬ ফেব্রুয়ারী ভোট গ্রহণের জন্য সমিতির গঠনতন্ত্র অনুসারে সকল প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ও রেওয়াজ ধরে রাখতে কমিশনের আচরণ বিধি মেনে শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণে তিনি সকল ভোটারদের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেছেন। কমিশনার এডভোকেট ফরিদ আহমদ জানান, চকরিয়া ভোট কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে তাঁরা শুক্রবার দিনেই চকরিয়া গিয়ে সেখানকার বাকী সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করবেন।

১৯০১ সালে প্রতিষ্ঠিত কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির শনিবার নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা হচ্ছে ৮১০ জন। তারমধ্যে, কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতি ভবন ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহন করা হবে ৭৫১ জনের। চকরিয়া উপজেলা চৌকি আইনজীবী সমিতি ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহন করা হবে ৫৯ জনের। শনিবার ২৬ ফেব্রুয়ারী শনিবার পৃথক ২ টি ভোট কেন্দ্রে সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের ভোট গ্রহন করা হবে।

এক বছর মেয়াদী নির্বাচিত ১৭ জনের কার্যকরী কমিটিতে চকরিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপজেলা চৌকি আইনজীবী সমিতি থেকে একজন করে মোট ৩ জন প্রতিনিধি কো-অপ্ট করা হবে। নির্বাচনে ১৭ টি পদের মধ্যে সভাপতি ও সম্পাদক সহ ৭ টি হচ্ছে সম্পাদকীয় পদ এবং অপর ৯ জন কার্যকরি পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হবেন।